আপনারা অনেকে হাই অ্যাডসেন্স সিপিসি দেখে লাফ মারেন! টুলের সাহায্য কিংবা গুগলে সার্চ করে কোনো পোস্ট পড়ে সিপিসি হাই দেখে লাফ মারেন! যে টপিক জানেন না, সেটা নিয়েও ভুলভাল পোস্ট লেখা শুরু করেন! এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা ও ভুল অ্যাপ্রোচ! টেকভার্সের আজকের পোস্টে আমরা, অ্যাডসেন্সের সিপিসি নিয়ে ভুল ধারণা দূর করার চেষ্টা করব! চলুন তাহলে শুরু করা যাক!
অ্যাডসেন্সের সিপিসি নিয়ে ভুল ধারণা:
আমরা গুগলে বিভিন্ন পোস্ট কিংবা গুগল অ্যাডওয়ার্ড এর কীওয়ার্ড প্ল্যানারসহ বিভিন্ন টুলে কোনো কীওয়ার্ডের যে সিপিসি দেখতে পাই, ওগুলো সাধারণত গুগলের সার্চ অ্যাডের হয়! হাই সিপিসি যেগুলো দেখতে পাওয়া যায়; সেগুলো ৯৯.৯% ই হলো সার্চ অ্যাডের সিপিসি! আর এই সার্চ অ্যাডের রেভেনিউ গুগল পুরোটা একা নেয়! পাব্লিশার্স তথা ব্লগার কিংবা ইউটিউবারদের সাথে শেয়ার করে না বললেই চলে! তাই হাই সিপিসি দেখে এক্সাইটেড হয়ে যাওয়া একেবারে বোকামি।
সার্চ অ্যাড কী?
সার্চ অ্যাড জিনিসটা কী একটু জানা যাক! গুগল অ্যাডওয়ার্ডে ঢুকলেই আমরা ৫-৬ ধরনের অ্যাড স্টাইল দেখতে পাই! ওখানে সার্চ অ্যাডও হলো গুগল অ্যাড এর একটা টাইপ! এই অ্যাড কারও সাইট, ইউটিউব ভিডিয়ো কিংবা অ্যাডমোব অ্যাপে কাজ করে না! তাহলে কোথায় করে? এগুলা শো করে মেইনলি সার্চ রেজাল্টে! আপনি কোনো পপুলার হাই সিপিসি কীওয়ার্ড গুগলে কিংবা ইউটিউবে সার্চ দিলে দেখবেন, হায়েস্ট ৫-৬টা পর্যন্ত অ্যাড শো করে! এগুলোই হলো সার্চ অ্যাড!
এই সার্চ অ্যাডে পজিশন পেতে ম্যালা কষ্ট হয়! কীওয়ার্ড প্ল্যানারে মেইনলি ডিফিকাল্টি দেখায় এই সার্চ অ্যাডে র্যাংকের জন্য! সবচেয়ে সহজ হিসেব হলো, সার্চ অ্যাডে ১ নাম্বারে পজিশন পেতে বিজ্ঞাপনদাতা কোম্পানিকে হায়েস্ট সিপিসি খরচ করতে হয়! এ কারণেই সার্চ অ্যাডের সিপিসি সবচেয়ে বেশি হয় + টুলগুলোতে সেই সিপিসিই মূলত শো করে! আরেকটা ব্যাপার আছে; যারা স্পেসিফিক কীওয়ার্ড গুগলে সার্চ করে, তারা বিজ্ঞাপনদাতার পটেনশিয়াল কাস্টমার! কারণ কারও লয়ার লাগবে বলেই সে গুগলে সার্চ করেছে! তাই সার্চ অ্যাডে ১০০০ ডলার খরচ করে, ১০০০০-২০০০০ ডলারের কাস্টমার পাওয়া কোনো ব্যাপার না! পটেনশিয়াল কাস্টমার পাবে বলেই, সে ১০০০ ডলার সিপিসি দিচ্ছ অ্যাডে!
ব্লগে / ইউটিউবে / অ্যাডমোব অ্যাপে কী ধরনের অ্যাড দেখায়?
অন্যদিকে আমাদের অ্যাডসেন্স ব্লগে যেসব অ্যাড শো করে ওগুলা হলো ডিসপ্লে অ্যাড [ভিডিয়ো, ইমেইজ, টেক্সট ইত্যাদি ফরমেটে]। অন্যের ওয়েবসাইট থেকে ডিসপ্লে অ্যাডে ক্লিক করে যে ইউজার বিজ্ঞাপনদাতার সাইটে যায়; সে পটেনশিয়াল কাস্টমার নাও হতে পারে; অনেকে ভুলে ক্লিক করে, অনেকে কৌতূহলবশত ক্লিক করে, অনেকে অ্যাডসেন্স ব্লগের পোস্ট ভেবে ক্লিক করে, অনেকে জাস্ট তথ্য জানতে ক্লিক করে! ফলে পটেনশিয়াল কাস্টমার হবার পসিবিলিটি থাকে কম! সেখানে কেউ কি ১০০০ ডলার সিপিসি দেবে অযথা লস করার জন্য?
আর সার্চ অ্যাডে যে ক্লিক আসে সেগুলো কারও ভিডিয়ো, ওয়েবসাইট কিংবা অ্যাপ থেকে যাচ্ছে না! একারণে ফুল সিপিসিটাই গুগল নিয়ে নেয়! গুগলের ইনকামের সিংহভাগ আসে এই সার্চ অ্যাড থেকেই! এগুলো সবটাই ওরা নিয়ে নেয়, কাউকে দেয় না! সার্চ অ্যাড থেকে ইনকামের একটা উপায় অবশ্য গুগল এখনো রেখেছে, বাট সেটা খুব একটা কাজ করে না!
সার্চ অ্যাড থেকে ইনকামের উপায়
উপায়টা হলো, অ্যাডসেন্সের কাস্টম সার্চ ইঞ্জিন! আমাদের সাইটে ব্লগারের কিংবা ওয়ার্ডপ্রেসের ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিন থাকে আমাদের সাইটের পোস্টগুলো খুঁজে নেওয়ার জন্য! আপনি চাইলে এই সার্চ ইঞ্জিনের বদলে সাইটে গুগল অ্যাডসেন্সের কাস্টম সার্চ ইঞ্জিন ইউজ করতে পারেন! অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভাল পেলে আপনি আনলিমিটেড + যেকোনো সময়েই এই সার্চ ইঞ্জিন বানিয়ে অন্য অ্যাড কোডের মতো সাইটে ইউজ করতে পারবেন!
তো, এই কাস্টম সার্চ ইঞ্জিনে কোনো ভিজিটর কোনো কীওয়ার্ড সার্চ দিলে সার্চ রেজাল্টের সাথে গুগল সার্চ অ্যাড শো করত আগে! এরপর ভিজিটর সেই অ্যাড ক্লিক করলে, সিপিসির ৫১% ব্লগারকে বা সাইটের মালিককে দিত আগে! এখন কেউ যদি আপনার সাইটে গিয়ে, আপনার সাইটের কাস্টম সার্চ ইঞ্জিনে নিচের শটের কীওয়ার্ডগুলা থেকে একটা সার্চ মারে, গুগল সেখানে সার্চ অ্যাড দেখায়, এরপর ভিজিটর সেটাতে ক্লিক করে, তাহলে আপনি সিপিসির ৫১% পাওয়ার কথা! ১০০০ ডলার সিপিসি হলে, আপনি ৫১০ ডলার পাওয়ার কথা!
কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হলো, ব্লগ সাইটের সার্চ ইঞ্জিনে ভিজিটররা সার্চ করে খুবই কম [গুগল থাকতে আপনার সাইটের সার্চ ইঞ্জিন ইউজ করতে যাবে কেন!]। ১০০০ ট্রাফিকে ১০টা সার্চ পাবেন কিনা সন্দেহ! তারচেয়েও খারাপ ব্যাপার; বর্তমানে গুগল এটা নামকা ওয়াস্তে রেখেছে, এখন কাস্টম সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ অ্যাডই শো করে না! আমি আমার সাইটে ১ বছর যাবত এই সার্চ ইঞ্জিন লাগিয়ে রাখছিলাম! ১ বছরে সার্চ এসেছে ১২০-১৫০ টার মতো মাত্র! আর অ্যাড যেহেতু শো করে না, তাই ইনকাম ডাবল জিরো! বলা যায়, সার্চ অ্যাড থেকে ইনকামের স্বপ্ন এখন অনেকটাই ডুমুরের ফুল হয়ে গেছে!
অ্যাডসেন্সের সিপিসি নিয়ে ভুল – বিভ্রান্তি
কিছুদিন আগে ফেসবুকে এক গ্রুপে একটা পোস্ট দেখেছিলাম, ওখানে একটা ভুল তথ্য দেওয়া ছিল যে- মেইন কীওয়ার্ড সার্চ করে সাইটে গেলে সিপিসি বেশি হয়! এইটা সম্পূর্ণ ভুল তথ্য! এই স্ক্রিনশটের কীওয়ার্ডটাই ধরি! এগুলা কোনো অর্জিন্যাল কাস্টমার সার্চ দিয়ে সার্চ অ্যাডে ক্লিক করলে, পুরো টাকা গুগলই নেবে! এরপর অর্গানিকে যারা র্যাংক করেছে ওরা ডোমেইন হোস্টিং সার্ভিস প্রভাইডার! ওরা তো আর অ্যাডসেন্স অ্যাড ইউজ-ই করে না, ডিরেক্ট সাইটে কাস্টমার গেইন করে! এখন আপনি লো কম্পিটিশন কীওয়ার্ড নিয়ে, হাই লেভেলের এসইও করে, এই সার্চ অ্যাড এবং অথেন্টিক সাইটগুলোকে টপকায়েও যদি র্যাংক করতেও পারেন! তাও আপনি এরকম সিপিসি পাবেন, সেটার গ্যারান্টি নেই!
কারণ ইউজার আপনার সাইটে গেলে, সার্চ অ্যাড পাবে না! পাবে হলো ডিসপ্লে অ্যাড! আর সেগুলো যে ডোমেইন হোস্টিং রিলেটেড হবে তাও না, ইউজারের ব্রাউজিং হিস্টোরি অনুযায়ী যেকোনো ধরনের অ্যাড হতে পারে! আবার হোস্টিং রিলেটেড ডিসপ্লে অ্যাড হলেও, সেটার সিপিসি মেইন সিপিসি থেকে অনেক লো হবে! এ ছাড়া দেশ ভেদেও সিপিসি কম বেশি হয়! বাংলাদেশে সিপিসি ১০ সেন্ট হলে, ইউএসএতে সিপিসি এক ডলার হতে পারে! তাই সিপিসি নিয়ে কেউই কখনো ১০০% গ্যারান্টি সহকারে কিছু বলতে পারবে না!
শেষকথা
এখন সবই তো বুঝা গেল! তাহলে অ্যাডসেন্স থেকে হাই সিপিসি পাওয়ার, ভালো ইনকাম করার কোনো উপায় কি নেই? থাকবে না কেন, অবশ্যই আছে! সেই উপায় জানতে চাইলে এই পোস্ট পড়ুন: অ্যাডসেন্স থেকে ভালো পরিমাণ আয়ের উপায় কী?
প্রিয় পাঠক, আশা করি আপনাদের— অ্যাডসেন্সের সিপিসি নিয়ে ভুল ধারণা দূর হয়েছে। পোস্টটি ভালো লাগলে পরিচিত বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। কোনো কিছু না বুঝলে কিংবা আরও কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করুন। এই ধরনের আরও তথ্যবহুল পোস্ট পড়তে টেকভার্সে চোখ রাখুন।