পরিচিতদের কাজ করা উচিত নয় কেন?

অফলাইনের কাজ বলুন কিংবা অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ; যেটা আপনার প্রফেশন বা ক্যারিয়ার, ওই সার্ভিস কখনো পরিচিতদের দিতে যাবেন না! পরিচিতদের প্রফেশনাল সার্ভিস দিতে গিয়ে দেখা যায় অনেকভাবে ধরা খেতে হয়, তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। তো, এই পোস্টে আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও বাস্তব গল্প শেয়ার করার মাধ্যমে আপনাদের ব্যাখ্যা করব- কেন পরিচিতদের কাজ করা উচিত নয়! চলুন শুরু করি।

পরিচিতদের কাজ করা উচিত নয় কেন?

আমার লাইফে আমি মোট টিউশনি করেছি হাতে গোণা ৫টা। এর মধ্যে একটা বাদে আর কোনো টিউশনি বাকি নেই; যেটাতে বেতন নিয়ে ছ্যাচড়ামি করেনি। ২০১৮ সালে পুরান ঢাকায় একটা টিউশনি করতাম! শুধু ওদের বাসায় কখনো বেতন নিয়ে ফাত্রামি করেনি! অন্যদিকে বাকিগুলো ইতিহাস রচনা করে ফেলেছে। কলেজে পড়ার সময় চট্টগ্রামে করা একটা টিউশনির ২ মাসের বেতন পাই এখনো। এরপর ২০১৯ সালের ঢাকা যাত্রাবাড়ির একটা টিউশনের এক মাসের বেতন পাই এখনো। করোনার কারণে ঢাকা ছেড়ে বাড়ি চলে আসছি ৫ মাস হচ্ছে। টাইম পাসের জন্য বাড়িতে একটা টিউশনি শুরু করেছিলাম; প্রথম মাসে ঠিক থাকলেও; দ্বিতীয় মাসেই আবার আমার সাথে সেই সেম কাহিনি শুরু হয়েছে! তো, প্রত্যেকটা টিউশনিই ছিল আমাদের পরিচিতদের মধ্যে কিংবা পরিচিতদের অনুরোধে করা!

যাই হোক এটা মূল কাহিনি না! মূল কাহিনিতে যাই-

করোনার কারণে ভার্সিটিতে বেশ ভালো অঙ্কের ডিউস জমে গেছিল আমার! সেটা আস্তে আস্তে শোধ করছিলাম! এর মধ্যে ফাইনাল এক্সাম শুরু হলো, একটা দিয়েও দিয়েছি! তো, হঠাৎ ভার্সিটি থেকে নোটিশ আসলো, ডিউস ক্লিয়ার না করলে বাকি এক্সামে অ্যাটেন্ড করার অনুমতি দেওয়া হবে না! আমি চোখে অন্ধকার দেখা শুরু করলাম! কারণ, মাসের মাঝামাঝি সময়ে কোনো কাজেরই পেমেন্ট পাবার ওয়ে নেই! এর মধ্যে টিউশনের বেতনও পাচ্ছি না! আবার, অন্যদিকে কিছু ক্লায়েন্টের কাজ করেছি, কিন্তু তাদের পেমেন্ট দেওয়ার নামগন্ধ নেই। বন্ধু-বান্ধব কারও থেকে হেল্প নেবো এমন কাউকেও পাচ্ছিলাম না; কারণ অজানা কারণে আমার বেশ অনেকজন ক্লোজ ফ্রেন্ডের সাথে আমার কোনো প্রকার যোগাযোগ নেই। যাদের সাথে আছে তাদের অনেকে হেল্প করতে পারবে না; আবার অনেকের কাছে আমি লজ্জায় হেল্প চাইতেও পারব না, আবার অনেকের কাছে আমার অলরেডি দেনা!

এদিকে ডিউসের ব্যবস্থা না করলে, আমার সেমিস্টার শেষ। ড্রপ হয়ে যাবে যাবে অথবা আবার ফি দিয়ে সাপ্লি দিতে হবে। উপয়ান্তর না দেখে, যাদের যাদের কাছ থেকে টাকা পাই মেসেজ করে সমস্যা বললাম; কয়েকজন ক্লায়েন্ট মেসেজ সিন করে রিপ্লাই-ই দিলো না। উল্লেখ্য এরা সবাই পরিচিত সার্কেলের।

এরপর, রাতে আরেকজন ক্লায়েন্টকে মেসেজ দিয়ে সমস্যা জানাই। উনার কাছে আমার কোনো পেমেন্ট বাকি নেই! উনি আমার পূর্বপরিচিত কিংবা রিয়েল লাইফে পরিচিত কেউও না! ২ বছর আগে আমাকে ফেসবুকে কেমনে জানি খুঁজে পেয়ে নক করেছিলেন কাজের ব্যাপারে! এরপর থেকে ২ বছর ধরে উনার সাথে অনেক কাজ করেছি; এসইও করেছি, লিংক বিন্ড করেছি, আর্টিকেল লিখে দিয়েছি; বাড়িতে আসার পর রিসেন্টলি উনার একটা সাইটে কন্টেন্ট আপ্লোড করার কাজ করছি! তো, ওই কাজে কোনো পেমেন্ট ডিউ ছিল না! উনাকে আমি সমস্যা জানিয়ে বলি যে, আমাকে যদি ২/৩ সপ্তাহের অ্যাডভান্স পেমেন্ট করেন আমার খুব হেল্প হবে।

আমার রিয়েল লাইফ পরিচিত ক্লায়েন্টরা যেখানে কাজ করিয়ে, প্রাপ্য পেমেন্ট না দিয়ে, মেসেজের রিপ্লাইও দেননি; সেখানে এই ক্লায়েন্ট আমার এক মেসেজেই বিনা বাক্য রাজি হয়ে গেলেন! আর আজ সকালে পেমেন্টও পাঠিয়ে দিয়েছেন! অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ফাইনালি এক্সামও দিতে পেরেছি।

কাছের মানুষদের থেকে বাঁশ খেয়ে খেয়ে যখন দুনিয়াদারি দোজখের মতো হয়ে ওঠে, তখন এই ভাইয়ার মতো কিছু সাদা মানুষদের জন্য আবার বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে। মনে হয়, পৃথিবীর সবকিছু এখনো নষ্টদের অধিকারে যায়নি।

মোরাল অফ দ্য স্টোরি

এই কাহিনি লেখার মূল কারণ হলো, মানে মোরাল অফ দ্য স্টোরি হলো: যারা ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে কাজ করেন, কেউ পার্সোনালি পরিচিত- মানে রিয়েল লাইফে পরিচিত কারও কাজ সম্পর্কের খাতিরে, চক্ষুলজ্জার কারণে করতে যাবেন না। করছেন তো মরছেন! আর যেকোনো প্রজেক্ট শুরু করার আগেই মিনিমাম ৫০% অ্যাডভান্স নিয়ে নেবেন! নাহলে জীবন ত্যাজপাতা হয়ে যাবে! হ্যাপি ফ্রিল্যান্সিং।

পোস্টটি ভালো লাগলে পরিচিত বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। কোনো কিছু না বুঝলে কিংবা আরও কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করুন। এ ধরনের আরও পোস্ট পেতে টেকভার্সে চোখ রাখুন।

Share This:

Leave a Reply:

Scroll to Top